বাংলাদেশের বাধা শুধুই বৃষ্টি
পাকিস্তানের আরেকটি উইকেটের পতন। আরেকবার উদ্যাপন হাসান মাহমুদের। এভাবে মোট পাঁচবার! টেস্টে এটাই প্রথম ৫ উইকেট হাসানের। গতকাল রাওয়ালপিন্ডিতে। ছবি: এএফপি
03/09/2024
রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট
পাকিস্তান: ২৭৪ ও ১৭২
বাংলাদেশ: ২৬২ ও ৪২/০
(১৪৩ রান দরকার বাংলাদেশের)
ক্রীড়া প্রতিবেদক, ঢাকা
আবহাওয়ার পূর্বাভাসের কারণেই শেষ দিন নিয়ে আগাম কিছু বলা কঠিন, কঠিন ম্যাচের ফলাফল অনুমান করা। যদিও গতকাল চতুর্থ দিন শেষে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টটা যেখানে গিয়ে ঠেকেছে, সেখান থেকে পাকিস্তানের জয়টাই সবচেয়ে দূরতম ফল বলে মনে হচ্ছে। তার চেয়ে অনেক সহজ বাংলাদেশের জয়। কিন্তু এ দুই সম্ভাবনাকেই ড্রেসিংরুমে বসিয়ে রেখে টেস্টটা শেষ হতে পারে অমীমাংসিত থেকেও। কারণ, পিন্ডির শেষ দিনে আছে বজ্রবৃষ্টির চোখরাঙানি।
হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানার দুরন্ত পেস আক্রমণের সামনে দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তান অলআউট হয়েছে ১৭২ রানে। হাসান তো ক্যারিয়ারের প্রথম ৫ উইকেটই তুলে নিলেন, নাহিদও ক্যারিয়ার–সেরা বোলিংয়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট। তাতে বাংলাদেশের জয়ের লক্ষ্যটা দাঁড়িয়েছে মোটামুটি সহজ, ১৮৫ রান। আলোকস্বল্পতায় দিনের খেলা শেষ হওয়ার আগে গতকালই ৪২ রান করে ফেলে দুই ওপেনার জাকির হাসান ও সাদমান ইসলাম কমিয়ে এনেছেন দূরত্ব। আজ শেষ দিনে আর ১৪৩ রান করলেই ২-০–তে সিরিজ জিতে পাকিস্তানকে তাদের মাটিতে ধবলধোলাই করে ফেলবে বাংলাদেশ। অন্যদিকে এই টেস্ট জিতে সিরিজ ড্র করতে হলে পাকিস্তানকে
বাংলাদেশের বাধা শুধুই বৃষ্টি
প্রথম পৃষ্ঠার পর
নিতে হবে ১০ উইকেট, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ভুলের প্রতিযোগিতায় না নামলে যা এক প্রকার অসম্ভব।
তবে বৃষ্টির শঙ্কার কারণে খুব আত্মবিশ্বাস নিয়ে জয়ের সুখকল্পনাটা করতে পারছে না বাংলাদেশ। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, রাওয়ালপিন্ডিতে আজ বজ্রবৃষ্টির সম্ভাবনা প্রবল। সেই বৃষ্টি শেষ দিনটাই ভাসিয়ে দেয় কি না, কিংবা যদি ফাঁক-ফোকরে খেলা হয়ও, বৃষ্টির ঝাপটায় পাকিস্তানের পেসারদের সামনে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের কী অবস্থা দাঁড়ায়—এসব নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তার মেঘ থাকছেই।
তবে আশার কথা, এই টেস্ট শেষ পর্যন্ত ড্র হলেও সিরিজ জিতবে বাংলাদেশ। আর দ্বিতীয় টেস্টেও তখন যতটুকু খেলা হবে, তা নিয়ে তুষ্ট হওয়ার সুযোগ থাকবে নাজমুল হোসেনের দলের। কখনো কখনো অল্পের জন্য না পারার আফসোসও হয়ে ওঠে তৃপ্ত হওয়ার মানদণ্ড। সেই মানদণ্ডে দ্বিতীয় টেস্টও বাংলাদেশ হবে অদৃশ্য বিজয়ী। প্রথম ইনিংসে লিটন-মিরাজের ব্যাটিংয়ের মতো দ্বিতীয় ইনিংসে হাসান-নাহিদের দুর্দান্ত বোলিংও তার অন্যতম কারণ।
তৃতীয় দিন শেষবেলাতেই পরপর দুই ওভারে আবদুল্লাহ শফিক ও ‘নাইটওয়াচম্যান’ খুররম শেহজাদকে ফেরান হাসান। ১২ রানে এগিয়ে থেকে গতকাল চতুর্থ দিনটা শুরু করলেও এগিয়ে ছিল আসলে বাংলাদেশই। সকালে আগের দিনের ছন্দ ধরে রাখেন পেসাররা। আরও ৩ উইকেট নিয়ে টেস্টে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেট পেলেন হাসান। ৪ উইকেট নেওয়া নাহিদের সঙ্গে রীতিমতো উইকেট নেওয়ার একটা লড়াই-ই হলো তাঁর। অন্য উইকেটটি অভিজ্ঞ পেসার তাসকিন আহমেদের।
তাসকিনের নেওয়া ওই উইকেট দিয়েই আসলে শুরু। পাকিস্তানের ওপেনার সাইম আইয়ুব ও শান মাসুদ জুটিটাকে বড় করার চেষ্টা করলেও ১৩তম ওভারে সাইমকে কাভারে অধিনায়ক নাজমুল হোসেনের তালুবন্দী করেন তাসকিন। পরের উইকেটের জন্যও বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। ১৭তম ওভারে নিজের প্রথম ওভার করতে আসা নাহিদের বলে কট বিহাইন্ড শান মাসুদ।
নাহিদের গতিময় বোলিংয়ের সামনে পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের অস্বস্তি বাড়তে থাকে। প্রতিপক্ষের সেরা ব্যাটসম্যান বাবর আজমের উইকেটও নিয়েছেন ২১ বছর বয়সী এই তরুণ পেসার। নাহিদের দ্বিতীয় ওভারে লেংথ থেকে লাফিয়ে ওঠা বলে ব্যাট ছুঁইয়ে প্রথম স্লিপে সাদমান ইসলামের হাতে ক্যাচ দেন বাবর। ১১ রান করে বাবরের ফিরে যাওয়া বিপদে ফেলে দেয় পাকিস্তানকে। ১৮.১ ওভারে রান ৫ উইকেটে ৬৫, লিড মাত্র ৭৭ রানের।
পরের বলেই পড়তে পারত আরেকটি উইকেট। কিন্তু সদ্য ক্রিজে আসা মোহাম্মদ রিজওয়ানকে ক্যাচ ফেলে বাঁচিয়ে দেন সাদমান। নাহিদকে তাঁর তৃতীয় শিকারের জন্য অবশ্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। বাঁহাতি সৌদ শাকিলকে পরের ওভারেই রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে বেরিয়ে যাওয়া বলে ফেলেন কট বিহাইন্ডের ফাঁদে। ৮১ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বসা পাকিস্তানের হয়ে লড়াই করে যান রিজওয়ান, তাঁকে সঙ্গ দেন সালমান আলী আগা। টানা তিন ওভারে ৩ উইকেট নেওয়া রানার বাউন্সারে মাথায় আঘাত পাওয়ার পরও রিজওয়ান হাল ছাড়েননি, সালমানকে নিয়ে যোগ করেন ৫৫ রান।
তবে বিপজ্জনক হয়ে ওঠার আগেই জুটিটা ভেঙে দেন হাসান। নতুন স্পেলের প্রথম ওভারেই দুর্দান্ত সেটআপে রিজওয়ানকে ফেলেন ভুল শটের ফাঁদে। অফ স্টাম্পের বাইরের আউট সুইং মেশানো বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে প্রথম স্লিপে নাজমুলের হাতে ক্যাচ দেন ৭৩ বলে ৪৩ রান করা রিজওয়ান। ঠিক পরের বলেই মোহাম্মদ আলীকে স্লিপে ক্যাচ বানিয়ে ড্রেসিংরুমের পথ দেখান ২৪ বছর বয়সী হাসান।
৪২তম ওভারে নতুন স্পেলে এসেই আবরার আহমেদকে বাউন্সারে কাঁপিয়ে ব্রেক থ্রু দেন নাহিদ। হাসানের মতো তাঁরও তখন ৪ উইকেট। পাকিস্তানকে অলআউট করতে দরকার ছিল আর ১ উইকেট। টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ৫ উইকেট নেওয়ার মধুর প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায় বাংলাদেশের দুই পেসারের মধ্যে। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মির হামজাকে কট বিহাইন্ডের ফাঁদে ফেলে তাতে জিতেছেন হাসানই। হাসানের তো বটেই, পাকিস্তানের মাটিতে বাংলাদেশের কোনো পেসারেরও এটাই প্রথম ৫ উইকেট। ৫ উইকেট নিতে হাসান দিয়েছেন ৪৩ রান, নাহিদের ৪ উইকেট এসেছে ৪৪ রানে। তাসকিনের ১ উইকেটসহ টেস্টে এই প্রথম এক ইনিংসে ১০ উইকেট নিলেন বাংলাদেশের পেসাররা।
১৮৫ রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশের দুই ওপেনার জাকির ও সাদমান শেষবেলায় যা করলেন, চতুর্থ ইনিংসে এর চেয়ে ভালো শুরু সম্ভবত হতে পারত না। জাকির করলেন আক্রমণাত্মক ব্যাটিং, সাদমান খেললেন দেখেশুনে। আলোকস্বল্পতায় দিনের খেলা শেষ হওয়ার আগে জাকির ৩১ রান করেছেন মাত্র ২৩ বলে, ১৯ বলে এসেছে সাদমানের ৯ রান। তাঁদের সৌজন্যে ৭ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়েই ৪২ রান পেয়ে যায় বাংলাদেশ।
কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে বাংলাদেশের সামনে বাকি দূরত্বটা এতই অল্প যে এই টেস্টে পাকিস্তানকে বাঁচাতে পারে কেবল বৃষ্টি।